হাউস

ইচ্ছে বা স্মৃতি যেখানে থেমে যায়, হাউস সেখান থেকেই শুরু করেঃ

এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যা।
জানালার কাঁচে বৃষ্টি টুপটাপ শব্দে, দেয়ালের গায়ে ছায়া খেলে যাচ্ছে কুয়াশার মতো। রান্নাঘর থেকে ভেসে আসছে খিচুড়ির ঘ্রাণ – সুগন্ধে মাখানো এক অপরূপ অন্তরঙ্গতা, যেন অদৃশ্য কোনো স্পর্শে ঘরটা আরও কাছাকাছি সরে এলো। এমনই এক ঘ্রাণ, একটা শব্দ, রান্নার ধোঁয়া বা পুরনো কথার টুকরো – অনেক সময়ই আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় এমন এক জগতে, যার বাস্তবতা অনেকটা ম্রিয়মান ও ধুসর, কিন্তু মনে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। হাউস ঠিক সেই জগতটিকেই বাস্তবে নিয়ে আসে আপনার জন্য, আপনার পরিবারের জন্য।

শুরুটা এক খিচুড়ির গল্প দিয়েঃ 
বৃষ্টিস্নাত এক সাঁঝবেলায়, রান্নাঘর থেকে ভেসে আসে মায়ের হাতে রাঁধা খিচুড়ির উষ্ণ গন্ধ – সেই ঘ্রাণে আপনার নাসারন্ধ্রে জেগে ওঠে এক অন্তরঙ্গ সুখ, যেন বহুদিনের চেনা আশ্রয়ে ফিরে আসা। পেটপূজার নিমন্ত্রণে আপনি হয়ে পড়েন ধ্যানমগ্ন – একজন সন্ন্যাসীর মতো নিবিষ্ট, যিনি ক্ষুধার চেয়ে বেশি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন প্রিয়জনের ভালোবাসায় বোনা একবেলা আহারের প্রতি। এই ঘ্রাণ আপনাকে খাইয়ে দেয় – শুধু পেট নয়, শিকড়ও। খেতে বসে আপনি বললেন, “মা, আজকের খিচুড়িটা দারুণ হয়েছে!” মা হেসে তাকালেন, সেই পরিচিত মৃদু হাসি – যেটা তেমন কিছু না বলেও অনেক কথা বলে। তিনি কেমন একটা স্মৃতিমাখা স্বরের মৃদু ঢেউয়ে বললেন – “এই ঘ্রাণটা আগে প্রায়ই উঠত ঘরে ঘরে… আমরা ‘কঁইজির চাল দিয়ে খিচুড়ি বানাতাম, একটু ভাঙা ভাঙা চাল, একটু মেঠো মিঠে গন্ধ…“কঁইজির চাল” দিয়ে বানানো খিচুড়িতে ছিল অনন্য এক সুগন্ধ, তার ঘ্রাণ এখনো নাকে লেগে আছে। আহা… যদি আরেকবার খেতে পারতাম!”

মায়ের হৃদয়ের এমন আকুলতায় আপনি থমকে গেলেন। সেই মুহূর্তে আপনি বুঝলেন, মা শুধু এক থালা খিচুড়ির গল্প বলেননি – তিনি বলছেন তার শৈশবের কথা, তার সময়ের কথা। ঘরটা হঠাৎ যেন নরম আলোয় ডুবে গেল, চারদিকে এক কোমল নিঃশব্দতা। মা আর কথা বলেন না, কিন্তু তাঁর কণ্ঠে কিছু একটা রয়ে যায় – একটা পুরনো বিকেল, হয়তো নানী বা দাদীর রান্নাঘর, গরম ধোঁয়ার ভেতর একজোড়া হাত, আর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমার ছোট্ট মা। মায়ের কণ্ঠে সময় যেন থেমে গেছে কিছুক্ষণ। হৃদয়ের ভেতর কোনো পুরনো কল্পনা চেপে বসে। একটা স্মৃতি, একটা স্বাদ, একটা শখ – যেটা কোনো সুপারশপে নেই। সেই মুহূর্তে একটা ইচ্ছা জন্ম নিল – “মায়ের শৈশবের সেই চাল কি আজও কোথাও আছে? মা’এর জন্য যদি একবার এনে দিতে পারতাম… সেই শৈশব, সেই দুপুর বা সন্ধ্যার খিচুড়ি, সেই অপূর্ব ঘ্রাণ।” 

এই ইচ্ছেটা খুব বড় কিছু নয়…

তবু এর ভেতরেই লুকিয়ে আছে এক জীবনের ওম, এক ভালোবাসার দীর্ঘশ্বাস, একটুকরো অতীতের আলো।

এই ইচ্ছেটুকুই হাউস এর জন্ম দিয়েছে। আপনার ইচ্ছেটা-ই আমাদের শুরু।

শতরঞ্জির স্মৃতিঃ একটি মেঝেতে পাতা গল্প, এক নিঃশব্দ ভালোবাসার রেখায় বোনা

একটি সন্ধ্যা।
আকাশের গায়ে রঙ মেখে নামে হালকা আঁধার। বাতাসে ভাসে রান্নার মৃদু গন্ধ – যেন কোনো হারিয়ে যাওয়া দুপুর, যা ফিরে এসেছে গোপনে, রান্নাঘরের ধোঁয়ার আড়ালে। ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আপনি তাকিয়ে আছেন নতুন কেনা পর্দার দিকে – আলোর ছায়ায় তার ভাঁজে ভাঁজে গৃহকোনের স্বপ্ন লেগে আছে। পর্দার রং, তার জমিনের সূক্ষ্ম অলংকার সবকিছু ঠিকঠাক, তবু কোথাও যেন কিসের অভাব! 

এমনই এক মুহূর্তে, ঘর সাজাতে সাজাতে হঠাৎ থেমে যায় সে – আপনার ভালোবাসার মানুষটি। তার চোখে অদ্ভুত এক দূরত্বের রেখা, কণ্ঠে অনুচ্চারিত কাঁপন। হঠাৎ সে বলে ওঠে –
“জানো? আমাদের নানুবাড়িতে একটা শতরঞ্জি ছিল – রংপুরের গঙ্গাচরা থেকে আনা, হাতে বোনা। কত রঙ, কত যত্ন! যেন মেঝেতে একটা গল্প পাতা থাকত – ধীরে ধীরে খুলে যেত পাতার পর পাতা। আহা…যদি আজও সেটা পেতাম…” 

তার কণ্ঠে এক নিঃশব্দ হাহাকার, সে ফিরে গেছে অনেক দূরের কোনো বিকেলে, কোনো গন্ধ, কোনো ছোঁয়ায়। আপনার মনে হয়, সে আর আপনার পাশে নেই। সে হাঁটছে কোনো দূরের বিকেলে, কোনো পুরনো ঘরের ভেতর দিয়ে, পায়ের নিচে মেঝেতে পাতা এক রঙিন শতরঞ্জি, যেখানে গল্পেরা নিঃশব্দে ছড়ানো। চোখে তাঁর দূরের কোনো আলো, কণ্ঠে কাঁপা কোনো নীরবতা। ঘরের ভেতর এক শূন্যতার ঢেউ খেলে। সে হাঁটছে সেই শতরঞ্জির উপর দিয়ে – যেখানে ছেলেবেলার দোল, নানুর হাতের গন্ধ, আর হারিয়ে যাওয়া রূপকথারা বুনে রেখেছে নিজেরা নিজেদের। আপনি দাঁড়িয়ে থাকেন, শব্দহীন। আপনার মনে হয় – বাতাসে ভেসে আসে সেই শতরঞ্জির গায়ে লেগে থাকা পুরনো দিনের গন্ধ, মাটির ঘ্রাণ, ছেলেবেলার কলরব। কোনো শব্দ নেই, কেবল অনুভব। হয়তো এই মুহূর্তে, আপনি স্পষ্ট অনুভব করেন সেই শতরঞ্জির গায়ে লেগে থাকা স্মৃতির গন্ধ, যা বাতাস পেরিয়ে আপনার ঘর ছুঁয়ে গেছে। এবং তখন, আপনিও নিজেকে প্রশ্ন করেন – এই চাওয়া, এত ছোট অথচ এত মায়াবি এই ইচ্ছেটা, এত দূরের অথচ এত ঘনিষ্ঠ – এইটুকুও কি দেওয়া যায় না?  

ঠিক এইখান থেকেই শুরু হয় “হাউস”-এর যাত্রা।

স্মৃতির রঙে রাঙানো শেকড়ের আহ্বানঃ একটি স্বাদের, স্পর্শের আত্মার ভ্রমণ
গ্রাসরুট ইনিশিয়েটিভ-এর ‘হাউস’ শুধু একটি উদ্যোগ নয়-এটি স্মৃতি সন্ধানী, হারানো স্বাদের ধ্রুবতারা। এটি এক প্রাণস্পন্দিত যাত্রা, যা আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় আপনার নিজের গল্পের আদিগন্তে। আমরা শুধু জিনিস খুঁজি না-আমরা খুঁজি অনুভূতি, ইতিহাস, এবং মানুষ। আমরা খুঁজি আপনাকে, আপনার হারিয়ে যাওয়া নিজস্বতাকে। গ্রাসরুট ইনিশিয়েটিভ-এর ‘হাউস’ ঠিক সেই ভাবনাকেই বাস্তবে রূপ দেয়। আমাদের টিম পা ফেলে বাংলাদেশের অন্তরাত্মায়-চাপা পড়ে থাকা গ্রামীণ পথে, যেখানে এখনো বাতাসে মিশে থাকে হারিয়ে যাওয়া স্বাদ, সুখস্মৃতির ঘ্রাণ।

আমরা খুঁজি সেই চাল, যেটির স্বাদে আপনার মায়ের শৈশব ঘুমিয়ে আছে। সেই হালুয়া, যা আপনার নানার বাড়ির উঠোনে এক সময়ের উৎসব ছিল। আমরা ছুঁয়ে দেখতে চাই সেই শাড়ির আঁচল, যা আপনার মায়ের, ফেলে আসা টাঙ্গাইলের দিনগুলোকে আবার জাগিয়ে তোলে। আমরা খুঁজি সেই নকশীকাঁথা, যা দাদুর মুখে গল্প হয়ে ফিরতো অলস দুপুরে, কুষ্টিয়ার হোসেনপুর গ্রামের রঙে-রূপে বোনা ছিল যা। আর সেই মাটির পুতুল, যা ছোটবোনের শৈশবকে রাঙিয়ে দিয়েছিল খাগড়াছড়ির পাহাড়ি রোদে। 

নানা স্বাদের রকমারী আঁচড়ে শেকড়ের স্পর্শঃ 
আমরা শুধু খুঁজে দিই না – আমরা হৃদয়ের অলিগলিতে হারিয়ে যাওয়া স্পর্শগুলোকে খুঁজে ফিরি। আমাদের খোঁজ একান্ত ব্যক্তিগত, অথচ এক বিস্তৃত জাতিগত চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা।

চাইলেই কুড়িগ্রামের পাবনা ভাগ্যলক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের ক্ষীরমোহনের কোমলতা হাজির হয় আপনার চায়ের টেবিলে।

পুরান ঢাকার প্রাচীন অলিগলি থেকে টেনে আনি বাকরখানির ইতিহাস – যা এক সময় নবাবি কাব্যের অংশ ছিল।

বান্দরবানের বন-ভূমির ছায়া থেকে বুনো মাশরুম – প্রকৃতির অকৃত্রিম উপহার – এসে পড়ে আপনার রান্নাঘরের কড়াইয়ে।

বরিশালের কুড়িয়ানা থেকে নৌকাবেয়ে আসে পেয়ারা, যার গায়ে লেগে থাকে শৈশবের নদীর ঘ্রাণ। 

রাজশাহীর রোদে পাকা গোপালভোগে জেগে ওঠে গ্রীষ্মের আদিম তৃষ্ণা।

মুখে দিলেই বিরলের রসভোগ লিচু ভেঙে পড়ে এক শিশুর নির্ভেজাল হাসির মতন, টুপ করে।

আর কুমিল্লার রসমালাই? যেন শতবর্ষ পুরনো প্রেমপত্র – দুধ, চিনির কালি আর গরম অনুভবের অক্ষরে লেখা।

‘হাউস’ টিম শুধুমাত্র একটি পণ্য পৌঁছে দিতে রওনা দেয় না – রওনা দেয় হৃদয়ের টানে, আপনার ফেলে আসা সময়টাকে আপনার হাতের মুঠোয় ফিরিয়ে দিতে। আমরা খুঁজে বের করি, তুলে আনি, এবং পৌঁছে দিই আপনার বাড়ির দরজায়।

শখের টানে হৃদয়ের হাটেঃ আপন ইচ্ছের খোঁজে, আপন হৃদয়ের স্পর্শে
আপনি শুধু বলুন – কী চান, কোথা থেকে চান?

আমরা পা রাখি সেই পথে, যেখানে আপন শখের ছায়া পড়ে। হোক তা পাহাড়ের কিনারায় এক আদিবাসী বাজার, পুরান ঢাকার কোনো অন্দরের রান্নাঘর, বা ধুলোমাখা পথের এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা শেষ বাকরখানির দোকান – আমরা খুঁজি, তুলে আনি, পৌঁছে দিই আপনার দরজায়, হৃদয়ের দোরগোড়ায়।

চাইলে আপনি থাকবেন আমাদের সঙ্গে – একটি লাইভ ভিডিও কলে, চোখের সামনে দেখবেন স্বাদ সংগ্রহের সেই মুহূর্তগুলো। এই সেবা একেবারেই এক্সক্লুসিভ  ও প্রিমিয়াম।

পণ্যের দাম – যাতায়াত খরচ, সার্ভিস চার্জ – সবকিছু মিলিয়ে একটু বেশি লাগতে পারে। কারণ এতে শুধু পণ্যের মূল্য নেই – আছে সময়, দূরত্ব, ভালোবাসা আর শখের অমূল্যতা। আর শখের দাম তো – লাখ টাকা হলেও কম!

হাউসঃ শুধুই পণ্য নয়, ফিরে পাওয়া একখণ্ড নিজস্বতা
হাউস কেবল কিছু এনে দেয় না, হাউস ফিরিয়ে আনে। ফিরিয়ে আনে কোনো অ্যালবামের ধুলো ধরা পাতা, মায়ের কণ্ঠে ভেসে আসা পুরোনো গানের কলি, আপনার বাবার ডায়েরিতে লেখা ’পানছড়ির হোটেলের ক্ষীর’। আমরা নিয়ে আসি শুধুমাত্র স্বাদ নয়, সেই স্বাদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আপন সময়, আপন মানুষ, আপন ঘ্রাণ। হাউস শুধু পণ্য নয়, একটি অনুভূতি, একটি সংযোগ – আপনার শৈশব, আপনার পরিবার, আপনার গল্পের সঙ্গে।

আমরা বিশ্বাস করি

দূরত্ব কখনো বিস্মৃতি নয়, 

আপনার শখ যত দূরেই থাকুক,

আমরা তা পৌঁছে দিবো…ঠিক আপনার হাতের মুঠোয়, ঠিক আপনার হৃদয়ে।

এখনই জানিয়ে দিন আপনার শখের তালিকা।

আমরা প্রস্তুত, বেরিয়ে পড়ার অপেক্ষায়….